জাহান্নাম

 ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে, মানুষের জাহান্নামে যাওয়ার কারণ মূলত তার *বিশ্বাস* (ইমান) এবং *আমল* (কর্ম) এর উপর নির্ভর করে। তবে, কিছু বিশেষ অঙ্গ ও আচরণ আছে যা ইসলামে নিষিদ্ধ এবং যা ব্যক্তি বা সমাজকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে, যদি তা অপরাধ হিসেবে গোনা হয় এবং সঠিক তওবা না করা হয়।

এখানে কিছু *অঙ্গ* এবং *আচরণ* উল্লেখ করা হলো, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং যার কারণে একজন মুসলমান জাহান্নামে যেতে পারে, যদি সে তার কর্মের জন্য তওবা না করে:

১. *মুখ (চোখ, কান, জবান)*:
   - *জবান (মুখ)*: মানুষের সবচেয়ে বড় এবং বিপজ্জনক অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি। *মিথ্যা বলা*, *গীবত (অন্যের পেছনে খারাপ কথা বলা)*, *নিন্দা করা*, *ঝগড়া করা*, *অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা* এবং *মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া* এগুলো জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
   - *চোখ*: *হারাম (নিষিদ্ধ) দেখা*, যেমন *অযথা পরপুরুষ বা পরস্ত্রীকে লক্ষ্য করা*, এর মাধ্যমে মানুষের ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 
   - *কান*: *গীবত শোনা*, *খারাপ কথা শোনা*, এবং *অশ্লীল গান শোনা* ইত্যাদি কাজগুলোও ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে।

২. *হাত*:
   - *চুরি করা*, *অন্যের ক্ষতি করা*, *অন্যের সম্পদ দখল করা*, *অথচ সে সম্পদ ন্যায্য নয়*, ইত্যাদি হাতের কাজ জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
   - *হাতে অস্ত্র ব্যবহার করে অপরাধ করা*, যেমন *হত্যা করা* বা *অন্যের উপর নির্যাতন করা* এটি ভয়ানক অপরাধ।

৩. *পা*

- *অন্যের ক্ষতি করতে পা দিয়ে চলা* (যেমন, কাউকে পায়ে দৌড়ানো বা কাউকে মারধর করা) বা *অশ্লীল জায়গায় চলাচল করা* (যেমন, জুয়া, মদ খাওয়া বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জায়গায় যাওয়া)।
   - *নির্দিষ্ট স্থানে নামাজ না পড়া*, বা *ফরজ আমলগুলো না করা* (যেমন, সঠিকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়া) ইত্যাদিও পায়ের মাধ্যমে হতে পারে।

৪. *লজ্জাস্থান (যোনি বা পেনিস)*:
   - *অনৈতিক যৌন সম্পর্ক*, যেমন *ব্যভিচার* (যেহেতু এটি ইসলামে হারাম), *বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক*, *সমকামিতা*, এবং *অশ্লীল কার্যকলাপ* – এসব কাজ মানুষের ঈমান এবং চরিত্রকে ধ্বংস করে দেয় এবং জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
   - এছাড়া *নিঃস্বার্থ বা হারাম উপায়ে সন্তান জন্ম দেওয়া* এবং *প্রজনন বিষয়ক আচরণে অসততা* ইসলামে নিষিদ্ধ।

৫. *কণ্ঠস্বর*:
   - *গান-বাজনা শোনা* যা ইসলামে হারাম হিসেবে বিবেচিত, এবং *অশ্লীল ভাষা* ব্যবহার, যা মানুষের চরিত্র এবং বিশ্বাসের ক্ষতি করতে পারে।

৬. *হৃদয়*:
   - *অবিশ্বাস বা কুফরী*: ঈমান বা বিশ্বাসহীনতা, যেমন আল্লাহর একত্ব ও রাসূলদের প্রতি বিশ্বাসে ঘাটতি, বা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা অস্বীকার করা। 
   - *অন্যদের প্রতি ঘৃণা বা ঈর্ষা*: মানুষের মধ্যে *বিদ্বেষ* বা *ঈর্ষা* থাকা, বিশেষত আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া নেয়ামত বা সফলতার প্রতি ঈর্ষা, যা মানুষকে দুষ্ট কাজে প্ররোচিত করতে পারে।
- *গর্ব বা অহংকার*: *আল্লাহর প্রতি অশ্রদ্ধা*, *অহংকার* বা *গর্ব* করা, বিশেষত আল্লাহর প্রতি সম্মান না থাকা, যেমন শয়তান করেছিল, যা তাকে জাহান্নামে নিয়ে গিয়েছিল।

৭. *দৃষ্টি ও মনোভাব*:
   - *অশ্লীলতা ও যৌনতা*: *অশ্লীল চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি* থাকা, বিশেষ করে যে বিষয়গুলো মানুষকে *হারাম কাজের দিকে* প্রলুব্ধ করে, যেমন অযথা নারীদের দিকে তাকানো বা অন্যের সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করা।
   
৮. *অন্যদের প্রতি আচরণ*:
   - *অন্যকে কষ্ট দেয়া*, *অন্যের অধিকারের প্রতি অবজ্ঞা*: যেমন *অন্যের সম্পদ হরণ করা*, *ধোকা দেয়া*, *অন্যকে অপমান করা*, *গীবত বা মিথ্যা বলা*—এগুলো সবার উপর আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা এবং এগুলো জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে।
   - *বাব-মায়ের প্রতি অবাধ্যতা*: একজন ব্যক্তি যদি তার পিতামাতার প্রতি অবাধ্য হয় এবং তাদের প্রতি অশ্রদ্ধা বা অবহেলা প্রদর্শন করে, তবে এটি একজন মুসলমানের জন্য খুবই মারাত্মক অপরাধ এবং তাকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে।

উপসংহার:
ইসলামে বলা হয়েছে, *"যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক (অবিশ্বাস) করবে এবং তার কাজের জন্য তওবা না করবে, সে জাহান্নামে যাবে"*। তবে, যদি ব্যক্তি তার গুনাহ থেকে তওবা করে এবং সৎ কাজ করে, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করতে পারেন। তাই একজন মুসলমানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তার *বিশ্বাস ও কর্মের প্রতি সতর্ক থাকা*, এবং আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণ করা
যখন কোনো ব্যক্তি জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবহারকে দেখে, তখন তার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত *তওবা করা*, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সৎকর্মে মনোনিবেশ করা।